কিশমিশের ইংরেজি হচ্ছে রেইজিন। তবে রেইজিন কিন্তু সব কিশমিশ নয়! এ নিয়ে নানা দেশে বিভ্রান্তির কোনো শেষ নেই। আমাদের দেশে যে সোনালি রঙের ছোট-বড় আকৃতির সুন্দর কিশমিশ পাওয়া যায়, তাকে ‘সুলতানা’ বলা হয়। বীজহীন সবুজ আঙুর থেকে হয় এটি। আর কালো আঙুর থেকে হয় ‘রেইজিন’। এটি দেখতে সুলতানা থেকে কালো বা একটু বেশি বাদামি রঙের হয়ে থাকে। এই দুটি ছাড়াও ‘কারেন্ট’ নামের কিশমিশ রয়েছে। কারেন্ট সুলতানা ও রেইজিনের চেয়ে আকৃতিতে ছোট ও স্বাদে একটু টক ধাঁচের হয়ে থাকে। এ জন্য ইউরোপ আমেরিকায় মিষ্টির পাশাপাশি ঝাল খাবারে এটি ব্যবহৃত হয়।
পুষ্টি উপাদান
যেহেতু আমাদের দেশে ‘সুলতানা’ বেশি পাওয়া যায়, সেহেতু এর গুণাগুণ সম্পর্কে বলা দরকার। এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আঙুরের চেয়ে বেশি। এ জন্য পুষ্টিবিদেরা প্রতিদিন অল্প পরিমাণে হলেও কিশমিশ খেতে বলেছেন।
এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম সোনালি কিশমিশ বা সুলতানায় আছে ১০৬ ক্যালরি। এ ছাড়া আছে ২২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম আঁশ ও ২১ গ্রাম চিনি। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও পটাশিয়ামের মতো পুষ্টি উপাদান।
কিশমিশ খেলে মিলবে ৭ স্বাস্থ্য উপকারিতা
কিশমিশ খেলে মিলবে ৭ স্বাস্থ্য উপকারিতা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে অন্যতম উপকারী খাবার হচ্ছে ড্রাই ফ্রুটস। আর এর মধ্যে আমাদের অনেক পরিচিত একটি হচ্ছে কিশমিশ।
খালি মুখে বা পানি দিয়ে ভিজিয়ে খাওয়ার পাশাপাশি পোলাও, পায়েসসহ বিভিন্ন রান্নায় কিশমিশ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনদের অনেকেই কিশমিশ ভেজানো পানি পান করে থাকেন।
বিভিন্ন খাবারে কিশমিশ যোগ করলে যেন খাবারের স্বাদও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এছাড়া চীনাবাদাম, আলমন্ড বা কাজুবাদামের মতো অন্য ড্রাই ফ্রুটসের স্বাদ ভালো না লাগলে সেগুলোর সঙ্গে কিশমিশ চিবিয়ে খেতে পারেন।
তাতে মিলবে বাড়তি স্বাদ।
আমাদের মধ্যে কিশমিশ অনেক পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও এটির গুণাবলি অনেকেরই অজানা।
তাই আজ জানুন কিশমিশ খাওয়ার সাত স্বাস্থ্য উপকারিতা-
১. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় উপকারী
কিশমিশে ভালো মাত্রায় পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আর এ উপাদানগুলো অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এগুলো সিস্টেম থেকে টক্সিন অপসারণের পাশাপাশি গাউট, আর্থ্রাইটিস, কিডনিতে পাথর এবং হৃদরোগের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধেও অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে।
২. রক্তস্বল্পতায় উপকারী
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকে। এ কারণে এটি শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, কিশমিশে থাকা তামা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
৩. হজমে উপকারী
নিয়মিত কিছু পরিমাণে কিশমিশ খেলে তা পেট ভালো রাখদতে সহায়তা করতে পারে। এতে ভালো পরিমানে ফাইবার থাকার কারণে তা পানির উপস্থিতিতে ফুলে উঠতে শুরু করে আর পেটে রেচক প্রভাব দেয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৪. ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী
কিশমিশে ক্যাটেচিং নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যাল কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আর অনেক সময় এ কার্যকলাপটি টিউমার এবং কোলন ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।
৫. সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে
কিশমিশে পলিফেনলিক ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নামের একটি উপাদান থাকে। এটি মূলত একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করায় তা জ্বরের ঝুঁকি কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কিশমিশ খেলে তা ঠাণ্ডা এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
৬. ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
ত্বকের কোষকে যে কোনো ক্ষতি থেকে রক্ষা করেতে অনেক উপকারী বূমিকা পালন করে কিশমিশ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষ, কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের ক্ষতি থেকে ফ্রি র্যাডিকেলগুলোকে বাধা দেয়। এর ফলে এটি বলি, সূক্ষ্ম রেখা ও ত্বকে দাগ দেখা দেওয়ার সমস্যাসহ বার্ধক্যের লক্ষণ অনেকটা বিলম্ব করতে সহায়তা করে।
৭. ওজন বৃদ্ধিতে উপকারী
ওজন বাড়াতে চাইলে সেরা একটি উপায় হতে পারে কিশমিশ খাওয়া। এই ড্রাই ফ্রুটে ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকার কারণে এটি শরীরে প্রচুর শক্তি দিতে পারে। সেই সঙ্গে এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল জমতে বাধা দিয়ে ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
তথ্যসূত্র: স্টাইলক্রেজ ডটকম
0 Reviews For The Product